ঘুরে আসুন রাজশাহী
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
রাজশাহী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের (উত্তরবঙ্গের) একটি প্রধান শহর। এটি রাজশাহী বিভাগ এর রাজশাহী জেলার অন্তর্গত। রাজশাহী শহর বিখ্যাত পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। রেশমীবস্ত্রের কারণে রাজশাহীকে রেশমনগরী (Silk City) নামে ডাকা হয়। রাজশাহী শহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের অনেকগুলির খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। নামকরা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য রাজশাহী শহর শিক্ষানগরী নামেও পরিচিত। রাজশাহী শহরে এবং এর আশেপাশে বেশ কিছু বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয় রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তর-পশ্চিমে পদ্মার তীরঘেষে প্রায় ৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে গড়ে ওঠা শান্তিপ্রিয় এক নগরী। ৮টি জেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে রাজশাহী বিভাগ। শান্তির নগরী, শিক্ষানগরী এবং রেশম এ নগরীর রসাল আমের কথা না-ই বা বললাম! সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই এ শহরের নাম লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। রেশম ছিল এর মূল কারণ। রেশম উৎপাদন, ভারতের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার কারণে ইংরেজ বণিকদের কাছে শহরটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ফলে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে রাজশাহী গুরত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আপনার ঘুরে বেড়ানোর জন্য রাজশাহী হতে পারে চমৎকার একটি জায়গা।
কোথায় বেড়াবেনঃ- রাজশাহীতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯১০ সালে ইতিহাস ও ঐতিহ্যনুরাগী তিন বাঙালি- দিঘাপতিয়ার জমিদার শরত কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও রমাপ্রসাদ চন্দ্রের উদ্যোগে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৬ সালে মূল ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। জাদুঘরটি প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন। এর প্রদর্শনী ৬টি গ্যালারিতে বিভক্ত। এখানে পাল, সেন যুগের দুর্লভ কিছু শিলালিপি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রাচীন, দুষ্প্রাপ্য কয়েকটি বৌদ্ধমূর্তি। জাদুঘর লাইব্রেরিতে রয়েছে ১৫ হাজার বইয়ের বিশাল সমাহার। মাত্র ৩২টি পুরাকীর্তি নিয়ে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর যাত্রা শুরু করলেও আজ এখানে প্রায় ১৬ হাজারেরও অধিক পুরাকীর্তি সংগৃহীত রয়েছে।
পদ্মার তীর: শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা। যে সময়ই হোক না কেন, পদ্মার তীর আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এখানে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এছাড়াও পদ্মা বুকে নৌকা ভ্রমণ এবং বিজিবি কর্তৃক পরিচালিত স্পিড বোড রাইডিং উপভোগ করতে পারবেন।
হযরত শাহমুখদুম(র.) মাজার: রাজশাহীর পদ্মার তীরঘেষে গড়ে ওঠা দরগাপাড়ায় অবস্থিত মাজারটি রাজশাহীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ন স্থান।
কেন্দ্রীয় উদ্যান এবং চিড়িয়াখানা: পদ্মার তীর ঘেষে গড়ে ওঠা অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। অনেক দেশি-বিদেশী পশু-পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ বাচ্চাদের জন্য রাইডিং, হেলিপ্যাড ও ছোট পাহাড় নিয়ে অবস্থিত।
শহীদ জিয়া পার্ক: মনোরেল, বাম্পিং কার সহ বেশ কিছু মজাদার রাইড সহ শহরের নিকটে নওদাপাড়া এলাকায় এই বিনোদন কেন্দ্রটি অবস্থিত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: প্রকৃতি এবং শিক্ষার অসাধারন সমন্বয়। রাজশাহী ১৮৭৬ সালে পৌরসভা এবং ১৯৯১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। সে বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে দেশের অন্যতম বৃহৎ মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য সাবাস বাংলাদেশের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভাস্কর্যটির নকশা করেন শিল্পী নিতুন কুণ্ডু। ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদ জননী বেগম জাহানারা ইমাম ভাস্কর্যটি উন্মোচন করেন। এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশ দ্বারের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। ভাস্কর্যে দুজন মুক্তিযোদ্ধার একজন রাইফেল উঁচু করে দৃপ্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে, অন্যজন রাইফেল হাতে শত্রুর মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। ভাস্কর্যের পিছনে ৩৬ ফুট উঁচু একটি দেয়াল। দেয়ালের ওপরের দিকে সূর্য প্রতীকে একটি শূন্য বৃত্ত। বেদির উভয় পাশে রয়েছে ছয় ফুট বাই পাঁচ ফুট দুটি রিলিফ প্যানেল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ: রাজশাহী বশ্বিবদ্যিালয় কলজে ১৮৭৩ সালে স্থাপিত হয়। সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছিলনা। সকল উচ্চত্বর ডিগ্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকেই নিতে হতো। রাজশাহী শহরের পদ্মার তীরে শতবছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী বিল্ডিং-এ এখনো ক্লাস হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ: মেডিকেল স্থাপিত হয় ১৯৫৮ইং সালে বাংলাদেশে ৬ টি মেডিকেল কলেজ বৃটিশ স্বীকৃত এর মধ্যে অন্যতম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট): শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘেষা রুয়েট সুবিসাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত। রুয়েট স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে।
কাশিয়া ডাংগা: এখান থেকে শুরু করে চাপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে সুবিস্তৃত আম বাগান।
বাঘা মসজিদ: পঞ্চাশ টাকার নোটে যে মসজিদটি দেখতে পান সেটিই হলো রাজশাহীর ঐহিত্যবাহী বাঘা মসজিদ। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০কিমি পুর্বে অবস্থিত।
পুঠিয়া রাজবাড়ী: রাজশাহী শহর থেকে ৩০কিমি পুর্বে অবস্থিত পুঠিয়ায় গেলে দেখতে পাবেন পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ শিবমন্দীর সহ অসংখ্য পুরা কীর্তি।
সারদা পুলিশ একাডেমী: রাজশাহী থেকে ৩০ কিমি দুরে পদ্মার তীরবর্তী সারদায় রযেছে পুলিশ প্রশিক্ষন কেন্দ্র।
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ: পুলিশ একাডেমীর কাছেই রয়েছে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ।
যেভাবে যাবেন- আকাশপথ, রেলপথ, সড়কপথ এবং জলপথে রাজশাহীতে যেতে পারেন।
আকাশপথ: শাহমুখদুম বিমানবন্দর। রাজশাহী শহরের নিকটবর্তী নওহাটায় অবস্থিত বিমান বন্দরটি রাজধানী ঢাকার সাথে রাজশাহীকে আকাশ পথে যুক্ত করেছে।
সড়কপথ: রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় প্রতি আধা ঘন্টায় একটি করে বাস ছাড়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাস সার্ভিসগুলোর অন্যতম: ১. গ্রীন লাইন ২. ন্যাশনাল ট্রাভেলস ৩. দেশ ট্রাভেলস ৪. শ্যামলী পরিবহন ৫. হানিফ এন্টারপ্রাইজ।
রেলপথ: সিল্ক সিটি, ধূমকেতু ও পদ্মা এক্সপ্রেস, রেলপথে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবার অন্যতম আধুনিক আন্ত:নগর রেল ব্যবস্থা। সিল্কসিটি ঢাকা থেকে দুপুর ২.৪০ মি. এ ছেড়ে যায়। এবং রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে সকাল ৭.৩৫ মি. এ।
স্থানীয় যোগাযোগ: শহরের মধ্যে ঘুরতে হলে সর্বোত্তম বাহন হলো রিকশা। এছাড়াও ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সা সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী।
কেনাকাটা: সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, কাপড়পট্টি, নিউমার্কেট থেকে আপনার দরকারী জিনিসগুলো কিনে ফেলতে পারেন।
কোথায় খাবেন: চাইনিজ: নানকিং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এবং কুকিজার রয়েছে পদ্মার তীরবর্তী মনিবাজারে। সাফাওয়াং রয়েছে গ্রেটার রোডে। চিলিস রয়েছে সাহেব বাজারে। দেশী খাবারের জন্য “হিলসা”রয়েছে বাটার মোড়ে এবং হোটেল রহমানিয়া রয়েছে মালোপাড়ায়। মিষ্টির জন্য “রাজশাহী মিষ্টান্নভান্ডার”এর তুলনা আর নেই।
থাকবেন কোথায়: ভালো মানের হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: ১. পর্যটন মোটেল ২. হোটেল হকস ইন। ৩. রেড ক্যাসল ইন। ৪. হোটেল নাইস ৫. সুকণ্যা ইন্টারন্যাশনাল ৬. হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল।
আপনার ভ্রমণ আনন্দময় হোক।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে